বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে শুরু হল দুর্গাপুজো :

11th September 2020 1:56 pm বাঁকুড়া
বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে শুরু হল দুর্গাপুজো :


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : কৃষ্ণা নবমী পূন্য তিথিতে সাপ্তাহিক লকডাউনের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় দিনে তোপধ্বনির মাধ্যমে হাজার বছরের প্রাচীন মল্ল রাজাদের দেবী মৃন্ময়ীর পুজোর সূূচনা  ঘটল I আজ থেকে এক হাজার তেইশ বছর আগে প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে এক দৈব ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মৃন্ময়ীর পুজো । তারপর বিষ্ণুপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিড়াই নদী দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল । কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে দাপুটে মল্ল রাজাদের রাজ্যপাট । কিন্তু প্রাচীন সেই রীতি মেনে আজ একের পর এক মোট ন’বার তোপধ্বনীর মধ্য দিয়ে সূচীত হল দেবী মৃন্ময়ীর পুজো ।আর তাঁর সাথে সাথেই প্রাচীন মল্ল গড়ে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজা । সময়টা ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ । মল্ল রাজত্বের তৎকালীন রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে শিকারের উদ্যেশ্যে বেরিয়ে বাঁকুড়ার বন বিষ্ণুপুরে আসেন রাজা জগৎমল্ল । কথিত আছে আজ যে জায়গায় মৃন্ময়ী মন্দিরের অবস্থান সেখানেই একটি বটগাছের নিচে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েন রাজা জগৎমল্ল । তারপর একের পর এক দৈব ঘটনা ঘটতে থাকে রাজা জগৎমল্লর সঙ্গে । কথিত আছে একাধিক দৈব ঘটনার সম্মুখীন হয়ে রাজা জগৎমল্ল্র সামনে দেবী মৃন্ময়ী আবির্ভূতা হয়ে ওই বট গাছের নিচে তাঁর মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন । এরপর রাজা জগৎমল্লর উদ্যোগেই তৈরি হয় মৃন্ময়ীর মন্দির । ধীরে ধীরে প্রদ্যুম্নপুর থেকে মল্ল রাজাদের রাজধানী সরে আসে বন বিষ্ণুপুরে । মৃন্ময়ী মন্দিরের অদূরেই তৈরি হয় রাজ প্রাসাদ ।মৃন্ময়ীকেই কূলদেবী হিসাবে গ্রহন করেন মল্ল রাজ পরিবার । ধুমধামে শুরু হয় মৃন্ময়ীর পুজো ।রাজার পুজো । তাই কালের অমোঘ নিয়মে এই পুজোর রীতি নীতি ও আচারে মিশে গেছে প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্য ।  কিন্তু আজ থেকে ১০২৩ বছর আগে যে বলী নারায়নী পুঁথি অনুযায়ী শুরু হয়েছিল মৃন্ময়ীর পুজো আজো সেই নিয়ম রয়েছে অব্যাহত । আজো নিয়ম মেনে জীতাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ আজ নবমীর পূন্য লগ্নে স্থানীয় গোপাল সায়ের থেকে প্রাচীন মৃন্ময়ীর মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানীকে । এই বড় ঠাকুরানী আসলে মহাকালী । রীতি মেনে গোপাল সায়েরে বড় ঠাকুরানীর রূপী পটকে পুজো করে আনা হল মন্দিরে ।সুপ্রাচীন রীতি মেনে দেবীর আগমনী বার্তা ঘোষিত হয় ন’বার তোপধ্বনীর মধ্য দিয়ে ।নিয়ম মেনে এরপর প্রতিদিন মন্দিরে পুজীতা হবেন বড় ঠাকুরানী ।এরপর দুর্গা ষষ্ঠীতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানী অর্থাৎ মহা লক্ষ্মী ও ছোট ঠাকুরানী অর্থাৎ মহা সরস্বতী ।
ইতিহাসের অলিগলি বেয়ে সময় পেরিয়ে গেছে হাজার বছর । রাজ প্রাসাদ মিশে গেছে মাটিতে । সেই আভিজাত্যও আজ নেই । তবু মৃন্ময়ী আছেন । মৃন্ময়ী আছেন প্রাচীন মল্ল রাজগড়ে । একসময় মল্ল ভূম জুড়ে কলেরা মহামারী ঠেকাতে মৃন্ময়ীর পুজোর অন্যতম অঙ্গ হিসাবে মল্ল রাজারা চালু করেছিলেন খচ্চরবাহিনীর পুজো ।তারপর থেকে তা চলে আসছে । ফের একবার বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে মহামারী । বিষ্ণুপুরের রাজ পরিবার থেকে সাধারন মানুষ সকলেরই বিস্বাস তাদের প্রানের দেবী মৃন্ময়ী ফের একবার এই বিশ্ব মহামারী থেকে উদ্ধার করবেন বিশ্ব বাসীকে ।





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।